কম্পিউটার ব্যবহার করেছেন অথচ ভাইরাসের নাম শোনেননি বা ভাইরাসের কবলে পড়েননি এমন ব্যবহারকারী খুব কমই আছে। কম্পিউটারে লুকিয়ে থেকে ব্যবহারকারীর অজান্তে এটি কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করে। ভাইরাস সম্পর্কে ধারণা, সতর্ক থাকলে এর ভয়ঙ্কর প্রভাব, ক্ষতি থেকে কম্পিউটারকে রক্ষা করা যায়।

ভাইরাস কী
কম্পিউটার ভাইরাস একটি প্রোগ্রাম মাত্র, যা এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ছড়িয়ে পড়ে এবং হার্ডডিস্কের মূল্যবান তথ্য নষ্ট করা ছাড়াও কম্পিউটারের স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। যেহেতু এটি একটি প্রোগ্রাম সুতরাং প্রোগ্রামারের বেঁধে দেয়া কাজের বাইরে অন্য কোনো কিছু ভাইরাস করতে পারে না।

ভাইরাসের ইতিহাস
প্রথম কম্পিউটার ভাইরাস ‘ইল্ক ক্লোনার’ তৈরি হয় ১৯৮২ সালে। সে হিসেবে কম্পিউটার ভাইরাসের বয়স ২৫ বছর। ১৫ বছর বয়সী হাইস্কুলের ছাত্র রিক স্ক্রেন্টা ভাইরাসটি তৈরি করে। অ্যাপল-২ কম্পিউটারে ফ্লপি ডিস্কের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এটি। ফ্লপি ড্রাইভে কোনো ডিস্ক ঢোকালে ভাইরাসটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাতে ঢুকে যেত। আবার আক্রান্ত ফ্লপি অন্য যেসব কম্পিউটারে ব্যবহার করা হতো ভাইরাসটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেখানেও ঢুকে যেত। প্রতি ৫০ বার কম্পিউটার চালুর সময় এটি মনিটরে একটি কবিতা প্রদর্শন করত। ১৯৮৬ সালে ‘ব্রেইন’ নামে আরেকটি ভাইরাস তৈরি করেন পাকিস্তানের লাহোরের দুই সহোদর বাসিত এবং আমজাদ ফারুক আলভি। ‘ব্রেইন’ হার্ডডিস্কের বুট সেক্টরকে আক্রান্ত করত। ফলে হার্ডডিস্ক থেকে ডেটা পড়া যেত না। ২৩ বছর বয়সী রবার্ট মরিস ১৯৮৮ সালে ছাড়েন ‘মরিস-ওয়র্ম’, যা হার্ডডিস্কে নিজেকে রেপ্লিকেট [নিজের অনুরূপ কপি তৈরি] করার মাধ্যমে কম্পিউটারে মেমোরি হ্যাং করে দেয়। বিকল হয়ে যায় ৬ হাজার কম্পিউটার। জেলে যাওয়ার কথা থাকলেও ১০ হাজার ডলার জরিমানা ও ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করবে না এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেঁচে যায় মরিস। এরপর আরো অনেক ভাইরাস আসে। ১৯৯৯ সালে ছড়ায় ভয়াবহ ভাইরাস ‘মেলিসা’। আক্রান্ত ব্যক্তির মাইক্রোসফট আউটলুকে সংরক্ষিত ই-মেইল নিজের কপি পাঠাতো এটি। হার্ডডিস্কে থাকা মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ডকুমেন্টকে নষ্ট করে দিত এটি। আনুমানিক ৮০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি করা এই ভাইরাসের কারণে সে সময় অ্যান্টিভাইরাসের বিক্রি রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। ২০০০ সালে সারাবিশ্বের কম্পিউটারের ওপর ভয়াবহ আঘাতটি আসে। ভিজ্যুয়াল বেসিক স্ক্রিপ্টিং ভাষায় তৈরি ‘আইলাভইউ’ ওয়র্মটি [ একধরনের ভাইরাস] বিশ্বের প্রায় ৪৫ মিলিয়ন কম্পিউটার আক্রান্ত করে এবং ৭ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করে। মাত্র একদিনে ই-মেইলের মাধ্যমে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে যায় এটি। পেন্টাগন, সিআইএ ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের মতো বাঘা বাঘা প্রতিষ্ঠানকে তাদের সার্ভার বìধ রাখতে হয় এই ভাইরাসের ভয়ে। অনুসìধান করে ফিলিপাইনের এক ছাত্রকে অভিযুক্ত করে ইন্টারনেট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ফিলিপাইনের আইনে সাইবার অপরাধের কোনো বিচার না থাকায় কিছুই হয়নি অভিযুক্ত ছাত্রটির। ২০০১ সালে আসে জনপ্রিয় টেনিস তারকা ‘আনা কুর্নিকোভার’র নামে কুর্নিকোভা ভাইরাস। ভাইরাসটির কাজ ছিল কুর্নিকোভার ছবি মেইলের মাধ্যমে অন্যদের কাছে পাঠানো।

ভাইরাসের প্রকারভেদ
ইন্টারনেট দুনিয়ায় বহু ধরনের ভাইরাস রয়েছে। এদের উৎস, আক্রমণের কৌশল, লক্ষ্য, ক্ষতির ধরন এর ওপর ভিত্তি করে একে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়­
ওয়র্ম : এ ধরনের ভাইরাস সাধারণত করপোরেট নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। ইন্টারনেটের ব্যবহার দিন দিন যতই বাড়ছে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে। ‘আইলাভইউ’ ভাইরাসটি ছিল ওয়র্ম শ্রেণীর। বেশিরভাগ ওয়র্ম তৈরি হয় স্ক্রিপ্টিং ল্যাংগুয়েজ দিয়ে। ওয়র্মের আরো কয়েকটি উদাহরণ হচ্ছে ট্রাইল, মি, লাভগেট, এফ, ম্যাপবন।
ট্রোজান হর্স : এই ভাইরাস অন্য প্রোগ্রামের ছদ্মবেশ ধারণ করে থাকে। যেমন মধসব.বীব নামে থাকতে পারে। কেউ এটাকে গেম মনে করে ক্লিক করলেই বিপদ। ভাইরাসটি নিজের রূপে দেখা দেবে। এই ভাইরাসটি ফাইল মুছে দেয় এবং হার্ডডিস্ক ফরম্যাট করে দেয়। রৎপ.ংী২ এবং ঞৎরভড়ৎ ট্রোজান এর উদাহরণ।
স্প্যাম : যারা নিয়মিত ই-মেইল চেক করেন তারা স্প্যাম কী ভালোই বোঝেন আশা করি। স্প্যামাররা সাধারণত স্প্যামের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে। বিজ্ঞাপনগুলোতে কখনো থাকে আকর্ষণীয় পুরস্কারের ঘোষণা আবার কখনো থাকে সাহায্যের আবেদন, যার সবই ভুয়া। এমনকি স্প্যামাররা যেসব নাম, ঠিকানা, কোনো নাম্বার ব্যবহার করে সেগুলোও মিথ্যা। বিনামূল্যে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য অনেকে স্প্যাম ব্যবহার করে। কম্পিউটার এবং নেটওয়ার্ক সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে স্প্যাম এক দিকে যেমন নেটওয়ার্কের গতি কমায় অন্যদিকে অনাহূত ই-মেইলের মাধ্যমে মানুষের মূল্যবান সময় নষ্ট করে।
অ্যাডওয়্যার : নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এই ভাইরাসের কাজ। ব্যবহারকারীর উইন্ডোতে অ্যাড বা বিজ্ঞাপন সেঁটে দেয় একটি। ইন্টারনেটে গিয়ে কোনো পেজ খুললে ব্রাউজারের উইন্ডোতে একটি বারের মাধ্যমে এ কাজ করে ভাইরাসটি। কেটে দিলেও কিছুক্ষণ পর আবার দেখা দেয়।
স্পাইওয়্যার : গোয়েন্দাগিরি করাই এই ভাইরাসের কাজ। অন্য সফটওয়্যারের আড়ালে লুকিয়ে থেকে ব্যবহারকারীর কম্পিউটার থেকে তথ্য চুরি করে ব্যবহারকারীর অজান্তে তৃতীয় পক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেয়। অন্য কোনো সফটওয়্যারের সাথে লুকিয়ে থাকার সময় ওই সফটওয়্যারের সাথে ইনস্টল হয়ে যায়। স্পাইওয়্যার কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নিতে পারে, এর সহায়ক কোনো সফটওয়্যার ইনস্টল করতে পারে। ওয়েব ব্রাউজারকে অন্য কোনো ঠিকানায় ডাইভার্ট করে দিতে পারে। হ্যাকারদের কাছে এটি খুব জনপ্রিয়। স্পাইওয়্যার দূর করতে অনেক সময় অপারেটিং সিস্টেম নতুন করে সেটআপ দেয়া লাগে।
বুট সেক্টর ভাইরাস : প্রথম দিকের ভাইরাসগুলোর বেশিরভাগই ছিল বুট সেক্টর ভাইরাস। হার্ডডিস্ক বা ফ্লপি ডিস্কের বুট সেক্টরে লুকিয়ে থাকে এটি। এই ভাইরাস প্রথমে বুট সেক্টরে আঘাত হানে তারপর কম্পিউটার চালু হওয়ার সাথে সাথে হার্ডড্রাইভে চলে যায়। বর্তমানে বুট সেক্টর ভাইরাসের অস্তিত্ব নেই। কারণ অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার দিয়ে একে সহজে দূর করা যায়।
ম্যাক্রো ভাইরাস : যেসব প্রোগ্রাম বা অ্যাপ্লিকেশন ম্যাক্রো সাপোর্ট করে তারাই এই ভাইরাসের মূল টার্গেট। এ রকম কয়েকটি প্রোগ্রাম হচ্ছে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল স্প্রেডশিট, পাওয়ার পয়েন্ট, এক্সেস ডেটাবেজ, কোরেল ড্র ইত্যাদি। কতগুলো ধারাবাহিক কম্পিউটার অপারেশন একটিমাত্র নির্দেশের মাধ্যমে সম্পাদন করার জন্য ম্যাক্রো ব্যবহার হয়। ম্যাক্রো সাপোর্টেড ডকুমেন্ট খোলার সাথে সাথে ম্যাক্রো ভাইরাস কার্যক্রম শুরু করে। এরা ফাইল নষ্ট করে।
হক্স : হক্স মানে প্রতারণা। সুতরাং এই ভাইরাসটির কাজও তাই। অনেকে নতুন ভয়ঙ্কর ভাইরাস এসেছে বলে ই-মেইলে গুজব ছড়ায়। এটাকে বলা হচ্ছে হক্স ভাইরাস।

ভাইরাস যেভাবে ছড়ায়
সবচেয়ে বেশি ভাইরাস ছড়ায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। ই-মেইলের মাধ্যমে খুব সহজে এবং দ্রুত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। ২০০০ সালে গোটা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী লাভবাগ ভাইরাস ই-মেইলের মাধ্যমেই ছড়ায় মাত্র এক দিনে। ইন্টারনেট থেকে কোনো প্রোগ্রাম, ফাইল, সফটওয়্যার ডাউনলোড করার সময় কম্পিউটারে ভাইরাস চলে আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে ডাউনলোড করা সফটওয়্যারে ভাইরাস লুকিয়ে থাকে। নেটওয়ার্ক সিস্টেমে কোনো কম্পিউটার আক্রান্ত হলে নেটওয়ার্কে সংযুক্ত অন্য কম্পিউটারেও ভাইরাস ছড়াতে পারে। এ ছাড়া ফ্লপি ডিস্ক, সিডি, ইউএসবি ড্রাইভের মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়ায়। বিশ্বের প্রথম ভাইরাসটি ফ্লপি ডিস্কের মাধ্যমে ছড়ায়। ইদানীং পেন ড্রাইভ, এমপি-থ্রি’র প্রচলন বেশি হওয়ায় এদের মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়াচ্ছে।

আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু
উইকিপিডিয়ার পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ পর্যন্ত মাইক্রোসফটের জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেমে [ওএস] ভাইরাসের আক্রমণ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হওয়া এই ওএস -এ মোট ভাইরাস পাওয়া গেছে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৪০ হাজার। একই কোম্পানি পুরনো ওএস এমএস ওস -এ আক্রমণ করে ভিন্ন প্রকৃতির ৪ হাজার ভাইরাস। অন্য দিকে শক্তিশালী, অধিকতর নিরাপদ অপারেটিং সিস্টেম লিনাক্সও বাদ যায়নি ভাইরাসের হাত থেকে। লিনাক্সকে টার্গেট করে এ পর্যন্ত তারা ছেড়েছে প্রায় ৩০টি ভাইরাস। অ্যাপল কোম্পানির ম্যাক ওএস -এ ৬৩টি, এমবেডেড ওএস সিম্বিয়ানে ৮৩টি ভাইরাস আক্রমণ করে। ভাইরাসের প্রাথমিক লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে বাইনারি বা এক্সিকিউটেবল ফাইল যেমন .পড়স, .বীব, .ংুং, .নরহ, .ঢ়রভ, .বষভ বা যেকোনো ডেটা ফাইল। এ ছাড়া ফ্লপি ডিস্ক, হার্ডডিস্ক, মাস্টার বুট রেকর্ড ইত্যাদিও ভাইরাসের টার্গেট। স্ক্রিপ্ট ফাইল যেমন ব্যাচ ফাইল, ডিবি স্ক্রিপ্ট, শেল স্ক্রিপ্ট ইত্যাদির মাধ্যমে সহজে বিস্তার করা যায় বলে এরাও ভাইরাসের প্রিয় লক্ষ্যবস্তু।

ভাইরাস কী করতে পারে
ভাইরাস যা করতে পারে তা হলো : গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ফেলে দিতে পারে। বিভিন্ন ধরনের মেসেজ দিয়ে ব্যবহারকারীকে বিভ্রান্ত করতে পারে। হার্ডডিস্কের জায়গা দখল করে ভলিউম কমিয়ে দিতে পারে। হার্ডডিস্কের পার্টিশন ভেঙে নতুন পার্টিশন তৈরি করতে পারে। সিস্টেমের সময়, তারিখ পরিবর্তন করতে পারে বা সিস্টেমের গতি কমানো এমনকি হ্যাং করে দিতে পারে। কম্পিউটারের বিভিন্ন পোর্ট যেমন কম্প্যাটিবল পোর্টকে নিûিক্রয় করে দিতে পারে। হার্ডডিস্ক বা ফ্লপি ডিস্কের নিয়ন্ত্রণ বিচ্ছিন্নভাবে নিতে পারে। ফাইল, মেমোরি সাইজের পরিবর্তন করতে পারে। বুট টাইম বাড়িয়ে কম্পিউটার চালুর সময় বিলম্বিত করতে পারে। প্রিন্টার, কি-বোর্ড, মডেমের স্বাভাবিক কাজে বাধা তৈরি, বিভিন্ন ধরনের অযাচিত শব্দ, চিত্র, মেসেজ প্রদর্শন। অপারেটিং সিস্টেমের বিভিন্ন অংশ লুকানো বা মুছে ফেলা। ভবিষ্যতে যে ভাইরাস আসবে তাদের ক্ষতিকর প্রভাব আরো ভয়ঙ্কর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়
ভাইরাস থেকে বাঁচার সহজ উপায় হচ্ছে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা। স্পাইওয়্যারের জন্য অ্যান্টিস্পাইওয়্যার, স্প্যামের জন্য অ্যান্টিস্প্যাম। অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের বিভিন্ন ডেমো ভার্সন পাওয়া যায়। ইন্টারনেট থেকে এগুলো বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায়। তবে সমস্যা হচ্ছে অনেক ডেমোভার্সন নির্দিষ্ট সময় পর আর কাজ করে না। কোনো কোনো কোম্পানি আবার ফিন্স সংস্করণও দেয়। এগুলো নির্দিষ্ট সময় পর নিûিক্রয় হয় না। তবে নতুন ভাইরাস এলে অ্যান্টিভাইরাস আপডেট না করলে ভাইরাস ধরা যায় না। ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপডেট হয়ে যায়। এ ছাড়াও ওয়েবসাইট থেকে আপডেট ফাইল ডাউনলোড করেও ইনস্টল করা যায়। সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট তাদের ‘উইন্ডোজ লাইভ ওয়ান কেয়ার’ অ্যান্টিভাইরাসটি ৯০ দিনের ফিন্স ভার্সন দেয় যা তাদের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যায়। এ ছাড়া ম্যাকআফি, এভিজি, সিমেনটেক ইত্যাদি কোম্পানিও ডেমো, ফিন্স ভার্সন দেয়। ভাইরাসের আক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানির সংখ্যা। অনেক অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানি ভাইরাস নির্মাতাদের চাকরি দেয়। কারণ সে ভাইরাসের খুঁটিনাটি জানে ফলে এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্খা নিতে পারে সে। কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকা যায়­ নিয়মিত হার্ডডিস্ক অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে স্ক্যান করা। অপরিচিত ফাইল বা সন্দেহজনক ফাইল না খোলা। ই-মেইলে সংযুক্ত কোনো ফাইল নিশ্চিত হয়ে খোলা। অপরিচিত ব্যক্তির পাঠানো ফাইল না খোলা। ইন্টারনেট থেকে কোনো ফাইল বা সফটওয়্যার ডাউনলোড করার আগে দেখে নেয়া যে, সাইটটি বিশ্বস্ত কি না। ডাউনলোড করা ফাইল খোলা বা সফটওয়্যার ইনস্টল করার আগে অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে স্ক্যান করা। গুরুত্বপূর্ণ ফাইলের ব্যাকআপ রাখা বা সিডিতে সংরক্ষণ করে রাখা। ডায়ালআপ কানেকশনের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারের পর সংযোগ খুলে রাখা। নিয়মিত অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার আপডেট করা। কোনো ই-মেইলকে ভাইরাস মনে হলে অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানিকে সেটা পাঠানো যায়। অবশ্য এ ক্ষেত্রে তাদের সফটওয়্যারের ক্রেতা হতে হবে। নতুন ভাইরাস এবং তাদের ক্ষতিকর প্রভাব সম্বìেধ সচেতন থাকা। সিস্টেম রিস্টোর বা অপারেটিং সিস্টেম নতুন করে ইনস্টল করেও ভাইরাস দূর করা যায়। কিছু ভাইরাস আছে যারা সিস্টেম রিস্টোর এবং অপারেটিং সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ অংশ যেমন টাস্ক ম্যানেজার বা কমান্ড প্রম্পট নিûিক্রয় করে দেয়। যেমন সিয়াজের ভাইরাস। তখন নতুন সেটআপ ছাড়া উপায় নেই।

অ্যান্টিভাইরাস যেভাবে কাজ করে
দু’টি কৌশলে কাজ করে অ্যান্টিভাইরাস : ১. প্রতি অ্যান্টিভাইরাসের একটি ভাইরাস ডিকশনারি থাকে। সেখানে পরিচিত ভাইরাসের বিবরণ থাকে। সফটওয়্যারটি ফাইলের সাথে ভাইরাস ডিকশনারিতে রক্ষিত বিবরণ মিলিয়ে দেখে। মিলে গেলে এটাকে ভাইরাস হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যবস্খা গ্রহণ করে। এই পদ্ধতির সমস্যা হচ্ছে নতুন ভাইরাস ধরা যায় না। ২. দ্বিতীয় পদ্ধতিটি ভাইরাসের সাধারণ বৈশিষ্ট্য, কোনো প্রোগ্রামের সন্দেহজনক আচরণ শক্তিশালী এলগরিদমের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে। ডেটা বিশ্লেষণ, পোর্ট মনিটরিং এবং অন্যান্য কৌশলে কাজ করে এই পদ্ধতিটি।

ভাইরাস তৈরি কোনো বৈধ কাজ নয়। এটি এক ধরনের সাইবার অপরাধ। এই অপরাধ দমনের লক্ষ্যে তৈরি হয়েছে সাইবার আইন। তবুও থেমে নেই ভাইরাস প্রোগ্রামাররা। নিত্যনতুন ভাইরাস ছাড়ছে তারা। বসে নেই অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানিগুলো। ভাইরাসের সাথে পাল্লা দিতে তারাও ছাড়ছে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের আধুনিক সংস্করণ। ভবিষ্যৎ ভাইরাসের গতি-প্রকৃতি, আচরণ চিহ্নিত করতে চালাচ্ছে গবেষণা। ভয়ঙ্কর এই কম্পিউটার ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রতিরোধের পাশাপাশি দরকার সচেতনতা তৈরি করা এবং অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা ।